ঢাকাশুক্রবার , ২৬ এপ্রিল ২০২৪
  1. আন্তর্জাতিক
  2. ইসলাম
  3. খেলাধুলা
  4. গণমাধ্যম
  5. জাতীয়
  6. রাজনীতি
  7. লক্ষ্মীপুর
  8. শিক্ষাঙ্গন
  9. সম্পাদকীয়
  10. সারাদেশ
  11. সাহিত্য
আজকের সর্বশেষ সবখবর

পার্মানেন্ট ফোরামে এশিয়া সংলাপে  এজেন্ডা আইটেম ৫(ঙ)-তে জেএসএস প্রতিনিধির বক্তব্য

ডেস্ক এডিটর
এপ্রিল ২৬, ২০২৪ ৪:৪৩ অপরাহ্ণ
Link Copied!

এস চাঙমা সত্যজিৎ

ব্যুরো চীফ চট্টগ্রাম বিভাগঃ

পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির প্রতিনিধি চঞ্চনা চাকমা এজেন্ডা “আইটেম ৫(ঙ): আদিবাসী ও সদস্য রাষ্ট্র-এর মধ্যে আঞ্চলিক সংলাপে (এশিয়া রিওজন)” অংশগ্রহণ করেন এবং পারষ্পরিক মুখোমুখী সংলাপে (ইন্টারএকটিভ ডায়ালগ) মতামত তুলে ধরেন।

 

এই সংলাপ জাতিসংঘের আদিবাসী বিষয়ক পার্মানেন্ট ফোরামের ২৩তম অধিবেশনে ২৫ এপ্রিল বৃহষ্পতিবার সকাল ১০টা থেকে সোয়া ১১টা পর্যন্ত জাতিসংঘের সদরদপ্তরে অনুষ্ঠিত হয়।

 

চঞ্চনা চাকমা তার বক্তব্য বাংলাদেশ সরকারি প্রতিনিধিদলকে প্রশ্ন রেখে বলেছিলেন যে, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির দুই-তৃতীয়াংশ ধারা, বিশেষ করে চুক্তি মৌলিক বিষয়সমূহ, অবাস্তবায়িত থাকলেও বাংলাদেশ সরকার দেশে-বিদেশে জনমতকে বিভ্রান্ত করার জন্য একতরফাভাবে দাবি করছে যে, চুক্তির ৭২টি ধারার মধ্যে ৬৫টি বাস্তবায়িত হয়েছে। তাই যদি হতো, তাহলে-

 

বিগত ২৬ বছরেও পার্বত্য চট্টগ্রামের উপজাতি অধ্যুষিত অঞ্চলের মর্যাদা সংরক্ষণে কেন আইনী ও প্রশাসনিক পদক্ষেপ দেয়া হয়নি? কেনই বা প্রতিনিয়ত পার্বত্য চট্টগ্রামে বহিরাগতদের অনুপ্রবেশ ঘটছে?

 

পার্বত্য চট্টগ্রামের বিশেষ শাসনব্যবস্থার অধীনে প্রতিষ্ঠিত পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ ও তিন পার্বত্য জেলা পরিষদে কেন সাধারণ প্রশাসন, আইন-শৃঙ্খলা, পুলিশ, ভূমি ও ভূমি ব্যবস্থাপনা, বন ও পরিবেশ, পর্যটন, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নসহ রাজনৈতিক, প্রশাসনিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন সংক্রান্ত ক্ষমতা হস্তান্তর করা হয়নি?

 

বিগত ২৬ বছরেও কেন কনষ্টেবল থেকে সাব-ইনষ্টপেক্টর পর্যন্ত পার্বত্যবাসীদের নিয়োগ দিয়ে কেন ‘পার্বত্য জেলা পুলিশ বাহিনী’ গঠিত হলো না?

 

কেন এখনো সকল অস্থায়ী ক্যাম্প প্রত্যাহার করা হয়নি? কেন এখনো চার শতাধিক ক্যাম্প ও ‘অপারেশন উত্তরণ’ নাম সেনাশাসন বলবত্‌ রাখা হয়েছে? কেন এখনো আমাদের জীবন সেনাবাহিনীর হাতে থাকে?

 

বিগত ২৬ বছরেও কেন এখনো একটা ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি করা হয়নি? কেন আজ ৭ বছর ধরে ভূমি কমিশনের বিধিমালা প্রণয়নের কাজ সরকার ঝুলিয়ে রেখেছে?

 

কেন আদিবাসী জুম্মদের জায়গা-জমি হারাতে হচ্ছে? কেনই বা জুম্মরা সেনাবাহিনীর উচ্ছেদের মুখে রয়েছে?

 

কেন এখনো পার্বত্য চট্টগ্রামের স্থায়ী বাসিন্দাদের নিয়ে তিন পার্বত্য জেলার ভোটার তালিকা প্রণয়ন করা হয়নি?

 

কেন এখনো ৯৮ হাজার আভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তু পরিবারদের মধ্যে একটা পরিবারকেও পুনর্বাসন করা সম্ভব হয়নি? কেনই বা ভারত প্রত্যাগত ৯ হাজার শরণার্থী পরিবার ভূমি ফেরত পায়নি?

 

কেন এখনো অস্থানীয়দের নিকট প্রদত্ত ভূমি লীজ বাতিল করা হয়নি?

 

কেন সেটেলারদের পার্বত্য চট্টগ্রামের বাইরে সম্মানজনক পুনর্বাসন করা হয়নি? চুক্তি-উত্তর সময়ে কেনই বা সেটেলার কর্তৃক প্রশাসন ও রাষ্ট্রীয় বাহিনীর সহায়তায় আদিবাসী জুম্মদের উপর ২০টির অধিক সাম্প্রদায়িক হামলা হলো?

 

পার্বত্য প্রযোজ্য অন্যান্য সকল আইন ও বিধিমালা কেন এখনো চুক্তি মোতাবেক সংশোধিত হয়নি?

 

কেন প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে আদিবাসী কোটা নেই?

 

ম্যাডাম চেয়ার, এই সমস্ত প্রশ্ন প্রমাণ করেছে যে, সরকারের ৬৫টি ধারা বাস্তবায়নের সরকারি দাবি সত্য নয়। বাংলাদেশ সরকার যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে মিথ্যা বলছে তা প্রমাণ করার জন্য সময় পেলে আমি চুক্তির বিষয়ে আরও প্রশ্ন তুলতে পারি।

 

এভাবে প্রশ্ন রেখে চঞ্চনা চাকমা তার বক্তব্য শেষ করলে জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশনের একজন নারী কর্মকর্তা সংলাপে অংশগ্রহণ করেন। এতে তিনি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বিষয়ে সরকার মিথ্যা তথ্য প্রচার করছে না। এসময় পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়নবোর্ডের চেয়ারম্যান ও প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত সুপ্রদীপ চাকমাকে ইঙ্গিত করে বলেন, আমাদের কথা যদি বিশ্বাস না হয়, তাহলে সরকারি প্রতিনিধিদলে একজন আদিবাসী রয়েছেন, তাকে জিজ্ঞাসা করতে পারেন।

 

আদিবাসী প্রতিনিধিদের মধ্যে বাংলাদেশ আদিবাসী য়ুব ফোরামের টনি চিরান, চাকমা রাজ কার্যালয়ের উটিং মারমা এবং আদিবাসী তরুণ অধিকার কমী তৈসা ত্রিপুরা উপস্থিত ছিলেন। তবে তারা কেউই সংলাপে বক্তব্য প্রদান করেননি।

 

বাংলাদেশ সরকারি প্রতিনিধিদলের মধ্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো: মশিউর রহমান, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান ও প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত সুপ্রদীপ চাকমা এবং ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. খলিলুর রহমান ছাড়াও সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফিল্ড ইন্টালিজেন্স (ডিজিএফআই), পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় ও জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশনের কর্মকর্তারা অংশগ্রহণ করেছেন।

এশিয়া সংলাপ শেষে কনফারেন্স রুম থেকে বের হওয়ার পর চঞ্চনা চাকমাকে হুমকি দিয়ে ডিজিএফআইয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, বাংলাদেশ সরকারকে দায়ী করার (ব্লেম করার) কাজ অচিরেই বন্ধ করুন।

আদিবাসী অধিকার কর্মী প্রীতি বি চাকমা বলেন, বস্তুত এ ঘটনার মধ্য দিয়ে এটা প্রমাণিত হয় যে, জাতিসংঘের মতো আন্তর্জাতিক প্লাটফর্মেও সেনা গোয়েন্দা সংস্থার হুমকি-ধামকি থেকে রেহাই পাচ্ছেন না আদিবাসী অধিকার কর্মীরা। জাতিসংঘের মতো জায়গায় যদি এভাবে হুমকির সম্মুখীন হয়, তাহলে মাঠ পর্যায়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে কি অবস্থা হবে তা সহজেই অনুমেয়।

বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।