মোঃ ইউসুফ আলী, আটোয়ারী(পঞ্চগড়) প্রতিনিধি ঃ পঞ্চগড়ের ঐতিহ্য ও ঐতিহাসিক বার আউলিয়া মাজার শরীফের বার্ষিক ওরশ মোবারক প্রতি বছরের ন্যায় এবারও বৈশাখ মাসের শেষ বৃহস্পতিবার( ২৯ বৈশাখ ১৪৩০, ১১ মে ২০২৩) অনুষ্ঠিত হয়েছে। ওই দিন সকাল থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এ ওরশ মোবারকের কার্যক্রম শুরু হয়ে রাত ১০টায় আখেরী মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হয়। ওরশ উপলক্ষে দিনব্যাপি চলেছে মাজার জিয়ারত, মিলাদ মাহফিল ও তবারক বিতরণ। সকাল থেকেই জেলার প্রত্যন্ত এলাকা সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানতের নগদ টাকা, চাল, মুরগী, কবুতর ও গরু-ছাগল ভক্তজনরা দান করেন এবং সমবেত হন ঐতিহাসিক বার আউলিয়া মাজার প্রাঙ্গণে। এ উপলক্ষে বার আউলিয়া মাজার ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী আিফসার মোঃ মুসফিকুল আলম হালিম জানান, প্রশাসনের পক্ষ থেকে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ও আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য সর্বাত্মক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে এবং নিরাপত্তা জোরদারের জন্য অতিরিক্ত পুলিশ, আনসার, গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী ও গ্রাম পুলিশ সহ সকল আনুষ্ঠানিকতার মুল তদারকিতে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তাগণ দায়িত্বে আছেন।
বার আউলিয়াদের আগমনের ইতিহাস বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা গেলেও ওলীদের ইতিহাস রহস্যাবৃত। তাঁদের লিখিত কোন ইতিহাস আজও পাওয়া যায়নি। জানাগেছে, ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে এই বার জন আউলিয়া সুদুর পারস্য ইয়েমেন ও আরবের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এসে চট্রগ্রাম সহ পূর্ব বঙ্গের বিভিন্ন অঞ্চলে স্থান গড়ে তুলে ইসলাম প্রচার শুরু করেন। পরে স্থল পথে রওয়ানা হয়ে ইসলাম প্রচার করতে করতে উত্তরবঙ্গের শেষ প্রান্তে এসে পৌঁছান এবং পঞ্চগড়ের আটোয়ারী উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নে স্থায়ীভাবে আস্তানা গড়ে তুলে ইসলাম প্রচার করেন। আটোয়ারীর মাটিকে পূণ্য ভূমিতে পরিনত করার পর সময়ের বিবর্তনে ওলীদের ওখানে সমাহিত করা হয়। গড়ে উঠে বার আউলিয়া মাজার শরীফ। উল্লেখ্য, হযরত হেমায়েত আলী শাহ্(রঃ) ও হযরত নিয়ামত উল্লাহ শাহ্(রঃ) একসঙ্গে রয়েছেন, যা জোড়া কবর বলে পরিচিত বা মূল মাজার। অবশিষ্ট ১০ জন ওলীর কবরের প্রতিটি চারপাশে দেওয়াল নির্মাণ করে রাখা হয়েছে। কয়েকশ বছর আগে মুল মাজারের চারদিকে বিশাল এলাকা জুড়ে ঘন জঙ্গলে পরিপূর্ণ ছিল। সে জঙ্গলে বাঘ,ভাল্লূক ও বুনো শুকর সহ হিং¯্র জীবজন্তু বাস করতো। বর্তমানে সেই গভীর জঙ্গল আর নেই। ওলীগণ আধ্যাত্মিক ক্ষমতা সম্পন্ন ছিলেন। এই বার জন আউলিয়ার নাম তা¤্রপদে খোদিত ছিল। স্থানীয় জনশ্রæতি মতে, জমিদার কানাইলাল দলুই গং মাজারের জমি দান করার সময় তা সকলের নামে তা¤্রপদে দানপত্রটি খোদিত করেন। সেই তা¤্রপদটি হারিয়ে গেলেও ওলীদের নাম হারিয়ে যায়নি। বার জন আউলিয়া হলেন,(১) হযরত হেমায়েত আলী শাহ্(রঃ),(২) হযরত নিয়ামত উল্লাহ শাহ্(রঃ), (৩) হযরত কেরামত আলী শাহ্ (রঃ), (৪) হযরত আযহার আলী শাহ্(রঃ),(৫) হযরত হাকিম আলী শাহ্(রঃ),(৬) হযরত মনসুর আলী শাহ্(রঃ),(৭) হযরত মমিনুল শাহ্(রঃ),(৮) হযরত শেখ গরীবুল্লাহ (রঃ),(৯) হযরত আমজাদ আলী মোল্লা(রঃ),(১০) হযরত ফরিজ উদ্দীন আখতার (রঃ),(১১) হযরত শাহ্ মোক্তার আলী(রঃ) (১২) হযরত শাহ্ অলিউল্লাহ(রঃ)। লক্ষনীয় বিষয় যে, ওরশ মোবারক এর দিন সব ভেদাভেদ ভুলে হিন্দু, মুসলিম,বৌদ্ধ,খ্রিষ্টান সবাই মাজাওে আসেন। উৎসবে পরিনত হয় বৈশাখের শেষ বৃহস্পতিবার। সে উৎসব যেন সৃষ্টিকর্তার কাছে চাওয়ার উৎসব। সকল স্তরের নারী-পুরুষ পূণ্য ভূমিতে এসে মানত করেন।