নলডাঙ্গা(নাটোর)প্রতিনিধিঃ নাটোরের নলডাঙ্গায় ৫ বছর ধরে শিকলবন্দী জীবন পার করছেন ১৯ বছর বয়সী হামিদুল ইসলাম। সে উপজেলার পশ্চিম মাধনগরের বামনপাড়ার জহুরুল ইসলামের ছেলে। জানা যায়,২০১৪ সালের ইউনিয়ন পরিষদের ভোটের স্থানীয় এক ইউ,পি সদস্য পদপ্রার্থীর নিবাচনী প্রচারনার অংশ নেন হামিদুল,প্রতিমধ্যে হয় সড়ক দূঘটনা। মারাত্বক আহত তিনি-সেসময় বেঁচে গেলেও এখন মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে শিকল বন্ধী জীবন যাপন করছে সে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়,একটি আম গাছের সাথে পায়ে শিকলে বেঁধে রাখা হয়েছে তাকে। শিকলের শেষ অংশে ঝুলছে তালা। পায়ের সঙ্গে লাগানো শিকলই যেনো হামিদুলের সারা দিনের সঙ্গী। শিকলের আঘাতে হামিদুলের পায়ে পড়েছে দাগ। ঝড়-বৃষ্টি যাই হোক,হামিদুলকে শিকলবন্দী হয়ে গাছের নিচেই থাকতে হয়। চিৎকার করলেও দেখতে আসে না কেউ। পায়ে শিকল পরা অবস্থায়ই দিন শুরু হয়,বিকেল গড়িয়ে অন্ধকার নামে এ অবস্থাতেই। ফলে পায়ে সঙ্গে শিকল যেন নিত্যদিনের সঙ্গি। কখনো সে দাঁড়িয়ে থাকছে,কখনো সে শুয়ে বসে সময় কাটাচ্ছে। আবার কখনো গান-হাসি-কান্নার মধ্য দিয়েই কাটছে তার জীবন। সন্তানের এ অবস্থা দেখে চিন্তায় সারাক্ষণ কাঁদেন তার পিতা-মাতা ও স্বজনেরাও। পরিবারের সদস্য ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়,২০১৪ সালের ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে এক ইউ,পি সদস্য পদপ্রার্থীর নিবাচনী প্রচারনার অংশ নেন হামিদুল,প্রতিমধ্যে হয় সড়ক দূঘটনা। মারাত্বক আহত তিনি-সেসময় বেঁচে গেলেও এখন মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে শিকল বন্ধী প্রতিবন্ধি জীবন যাপন করছে সে। সেসময় অনেকেই সাহায্য সহযোগিতার আশ্বাস দিলেও কেউ কথা রাখেনি! অভাবের সংসারে এখন আর চিকিৎসা সম্ভব নয়। এজন্যই পায়ে শিকল দিয়ে গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখা হয়েছে তাকে। এভাবেই চলতে থাকে বছরের পর বছর। মুক্ত থাকলে কখন কী দুর্ঘটনা ঘটায় এমন আশঙ্কায় বন্দি করে রাখা হয়েছে বলে জানান- হামিদুলের মা-হাজরা বেগম ও পিতা জহরুল ইসলাম। হামিদুলকে শিকরে বেঁধে রেখে সেখানেই খাবার দেওয়া হয়। একদিন খেলে ২দিন চলে যায় তবুও খাবার খায় না। এভাবেই বছরের পর বছর ধরে চলছে হামিদুলের বন্দি জীবন। প্রস্রাব পায়খানা এলে চিৎকার শুরু করে পরে পলিথিন দিলে সেখানে পায়খানা করে এরপর তার মা অথবা বাবা পরিষ্কার করেন। সরকারি সহায়তায় উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করলে হয়তো স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারতো বলে জানায় তার পরিবার ও প্রতিবেশিরা। প্রতিবেশিরা জানান,হামিদুলের উন্নত চিকিৎসা তারা করবে কীভাবে? তাকে উন্নত চিকিৎসা করানোর সামর্থ্য হামিদুলের পরিবারের নেই। তার চিকিৎসায় বিত্তবান ও সরকারের প্রতি আহ্বান জানান পরিবারসহ এলাকাবাসী। হামিদুলের মা-হাজরা বেগম ও পিতা জহরুল ইসলাম বলেন,রাতে ছেলের পায়ে শিকল দিয়ে ঘরে ঘুমানোর ব্যবস্থা করি। দীর্ঘ সময় ধরে পায়ে বেঁধে রেখেছি আমার সন্তানকে। শিকল দিয়ে বেঁধে রাখায় পা ক্ষত হয়ে যাচ্ছে। এই দৃশ্য মা-বাবা হয়ে সহ্য করতে পারছি না। আমরা নিজেও সারা রাত ঘুমাতে পারি না। কারণ কখন সে কি করে বসে এই দুশ্চিন্তায় থাকতে হয় আমাদের। আমরা গরীব মানুষ,ঠিকমতো সংসার চালানোই আমাদের পক্ষে সম্ভব হয় না। এখন বাধ্য হয়ে গরীব বাবার বাড়িতে আশ্রয় নিতে হয়েছে আমাদের। নলডাঙ্গা উপজেলা সমাজসেবা কর্মকতা,সুমন সরকার জানান,আমরা বিষয়টি সম্পর্কে অবগত হয়েছি,যতদ্রুত সম্ভব আমরা তাকে প্রতিবন্ধী কার্ড করে দিবো।