নিজস্রাব প্রতিবেদক :: ধানীর মিরপুরের ঢাকা কমার্স কলেজ এলাকার ঝিলপাড় বস্তির সামনের রাস্তায় জমে থাকা পানিতে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে একই পরিবারের চার সদস্যসহ পাঁচজন আহত হন। তাদেরকে হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানে ওই পরিবারের তিনজনসহ চারজন মারা গেলেও অলৌকিকভাবে বেঁচে গেছে সাত মাস বয়সী শিশু হোসাইন।
বৃহস্পতিবার (২১ সেপ্টেম্বর) রাতে ওই রাস্তায় জমে থাকা পানির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিলেন মিজান (৩০) ও তার স্ত্রী মুক্তা বেগম (২৫)। সঙ্গে ছিল মেয়ে লিমা (৭) ও ছেলে হোসাইন (৭ মাস)। হঠাৎ করে তারা পানিতে পড়ে গেলে বিদ্যুৎস্পষ্ট হন।
এ সময় তাদেরকে উদ্ধার করতে পানিতে নামেন অনিক নামে এক অটোরিকশাচালক। এসময় হোসাইনকে তিনি পানি থেকে তুলে দিতে পারলেও লিমাকে তুলতে গিয়েই তিনি হন বিদ্যুৎস্পৃষ্ট। পরে স্থানীয়রা তাকেসহ বাকি চারজনকে দীর্ঘ চেষ্টার পর উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠালে সেখানে চিকিৎসক তাদেরকে মৃত ঘোষণা করেন।
শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) সকালে শিশু হোসাইনকে নিয়ে মিরপুর মডেল থানায় আসেন আমেনা বেগম নামে এক নারী। সেখানে তিনি শিশু হোসাইনের বেঁচে যাওয়া ঘটনার বর্ণনা করেন।
আমেনা বলেন, হোসাইনের মা যখন পানিতে পড়ে যায় তখন, হোসাইন মায়ের কোল থেকে ছিটকে পড়ে যায় পানিতে। এ সময় অনিক সঙ্গে সঙ্গে এসে হোসাইনকে পানি থেকে তুলে আমার কোলে দেয়। পরে আমি তাকে আমার বাসায় নিয়ে প্রথমে শরীরে গরম তেল দেই। এরপর তাকে নিয়ে যায় প্রথমে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখান থেকে ডাক্তার হোসাইনকে নিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলে। রাতে তাকে সেখানে নিয়ে যায়, চিকিৎসার পর সকালে ডাক্তার বলে হোসাইন এখন সুস্থ, তাকে বাসায় নিয়ে যাওয়ার জন্য। পরে আমি জানতে পারি হোসাইনের দাদা ও নানা মিরপুর মডেল থানায় আছে, তখন আমি এখানে আসি।
আমেনা বেগম আরও বলেন, হোসাইনকে অনিকের মাধ্যমে আল্লাহ বাঁচিয়েছেন। না হলে একই ঘটনায় তার মা-বাবা ও বোন এবং অনিক মারা গেছে, তার তো বাঁচার কথা ছিল না। এখন হোসাইনকে কোলে নেওয়ার বা দেখাশোনার লোক নেই। হোসাইনের নানা ও দাদা তার মা, বাবা ও বোনের মরদেহ নেওয়ার জন্য থানা ও হাসপাতালে দৌড়াদৌড়ি করছে। তাই আমি তাকে আপাতত দেখাশোনা করছি৷ তাদের কাজ শেষ হলে আমি হোসাইনকে তার নানা ও দাদার কাছে বুঝিয়ে দেব।
নিহত মিজানের গ্রামের বাড়ি বরিশালের ঝালকাঠিতে। সে গত কয়েক বছর ধরে পরিবার নিয়ে মিরপুর চিড়িয়াখানা রোডে বসবাস করে একটি ভাড়া বাসায়। মিজান মিরপুর এলাকায় ভাসমান দোকানে শরবত বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। গতকাল রাতে তিনি স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে ঝিলপাড় বস্তিতে শ্বশুরবাড়িতে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে নিজ বাসায় ফেরার পথে প্রাণ গেল তাদের।
মিজানের বাবা নাসির হাওলাদার বলেন, আমার দুই ছেলে ও এক মেয়ে। মিজান আমার মেজ ছেলে। পরশুদিন সকালে তারা ঝালকাঠি থেকে ঢাকায় আসে। তাদের এই অকাল মৃত্যু কোনোভাবে আমরা মেনে নিতে পারছি না। মাত্র এক দিন আগে ছেলে আমার ঢাকায় এসেছিল বৌ-বাচ্চা নিয়ে। এই দেখা যে শেষ দেখা হবে আমি কোনো দিন ভাবিনি।
মিজানের শ্বশুর মো.মহফিজ বলেন, আমার মেয়ে ও জামাই নাতি-নাতিনকে নিয়ে রাতে বাসা থেকে খেয়ে বের হয়। এই বের হওয়া যে শেষ তা জানলে তাদের কোনো দিন ছাড়তাম না। এই মৃত্যু মানতে পারছি না। আমার নাতিটার কী হবে। মাত্র সাত মাস বয়সে সে মা-বাবাকে হারিয়েছে। তার কী হবে এখন।
স্থানীয়দের অভিযোগ, ঝিলপাড় বস্তিকে কেন্দ্র করে বিদ্যুতের অবৈধ সংযোগের রমরমা ব্যবসা চলে আসছে বহুদিন ধরে। গতকালের মর্মান্তিক এই ঘটনাটিও এই অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগের কারণে ঘটেছে বলে অভিযোগ তাদের।
এ বিষয়ে মিরপুর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ মহসীন বলেন, অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগের বিষয়টি আমরা জানতে পেরেছি। এ বিষয়ে আমাদের তদন্ত চলমান রয়েছে। এ ছাড়া নিহতের স্বজনরা আমাদের কাছে একটি অভিযোগ করেছে। অবহেলিতজনিত মৃত্যুর বিষয়ে। অভিযুক্তি মামলা আকারের দায়েরের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ থেকে শুরু করে এই মৃত্যুর পেছনে কারো কোন দায় আছে কি না সেটি আমরা তদন্ত করে দেখব।