___________________ অ আ আবীর আকাশ —————————
বাংলা একাডেমী ও সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় এর উদ্যোগে জেলা প্রশাসনের বাস্তবায়নে লক্ষ্মীপুরে দুই দিনব্যাপী জেলাভিত্তিক সাহিত্য মেলার আয়োজন করা হয় বৃহস্পতি ও শুক্রবার। টানা বৈরি আবহাওয়া ও টানা বৃষ্টি উপেক্ষা করে জেলার বিভিন্ন উপজেলা ও প্রত্যন্ত এলাকা হতে কবি সাহিত্যিক ও সাহিত্যসেবিগণ উপস্থিত হন। নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী সকাল ৯ঃ০০ টায় লেখকদের নাম নিবন্ধনের মধ্য দিয়ে কার্যক্রম শুরু হওয়ার কথা থাকলেও অনুষ্ঠান শুরু হয় বারোটার পরে। বিকেল তিনটার দিকে লেখকদের মধ্যাহ্ন ভোজের জন্য মিষ্টির কার্টুনজাত পলিথিন মোড়া খাবার পরিবেশন করা হয়। এ খাবার দুর্গন্ধ হওয়ায় অনেক লেখক তা খেতে না পেরে ডাস্টবিনে ছুঁড়ে ফেলেন। এ বিষয়টি জেলা কালচারাল অফিসারকে জানানো হলে তিনি বলেন- ‘সকালে অর্ডার করেছি তো, তাই তারা সকাল-সকাল প্যাকেট করায় এরকম হয়েছে।’ লেখিয়েদের নিয়ে কর্মশালা হওয়ার কথা থাকলেও স্থানীয় এক লেখক দিয়ে পূর্বে লিখে রাখা যৎ সামান্য লেখা (চেয়ারে বসে) পাঠের মধ্য দিয়ে কর্মশালা শেষ করেন। সন্ধ্যার পরে লিখিয়েদের বদলে জাদুকর এনে জাদু প্রদর্শন, নৃত্য প্রদর্শন ইত্যাদি উপভোগ করতে দেখা যায় জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের। ২. দ্বিতীয় দিন শুক্রবারের কর্মসূচি সকাল দশটায় স্থানীয় লেখকদের সাহিত্য পাঠ, কবি কন্ঠে কবিতা পাঠ, ছড়া, কথা সাহিত্যিকদের ছোট গল্প ইত্যাদি হওয়ার কথা থাকলেও সকাল সাড়ে ১১ টায় স্থানীয় টিংকু রঞ্জন মল্লিক নামের এক ব্যক্তিকে দিয়ে উপস্থাপনা করিয়ে কবিতা পাঠ হলেও জেলা প্রশাসন কিবা কালচারাল অফিসার কেউ-ই উপস্থিত ছিলেন না। জুমার নামাজের বিরতির জন্য কবিগণ হইচই শুরু করলে ১.২০ মিনিটে অনুষ্ঠান বিরতি দেন টিংকু। জুমার নামাজ পড়ে এসে অনুষ্ঠানস্থলে কবিগণ প্রশাসনের কিবা অনুষ্ঠানের কাউকেই পাননি। কবিদের জন্য কোন খাবারের আয়োজন নেই, চা নাস্তা পানি কি বা খোঁজখবর নেয়ার মত কোন লোক নেই। প্রশাসন কিবা জেলা কালচারাল অফিসার সেখানে উপস্থিত ছিলেন না। কিন্তু অনুষ্ঠান সূচি অনুযায়ী সকাল দশটায় শুরু হয়ে বিকেল সাড়ে চারটায় টানা প্রোগ্রাম চলার কথা ছিল। অনুষ্ঠানসূচিতে শুক্রবারের পবিত্র জুমার নামাজ ও মধ্যাহ্ন ভোজের কোনো বিরতি রাখা হয়নি। সারাদিনের অভুক্ত কবিগণ ঘোরাঘুরি করে সন্ধ্যার জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন। এদের মধ্যে জেলার প্রথম সারির কবিগন এসব অবহেলার দরুন জেলা সাহিত্য মেলা বর্জন করে অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগ করতে শুরু করেন, অনেকে ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। একপর্যায়ে সন্ধ্যার আগ মুহূর্তে সমাপনী দিনের অনুষ্ঠান সভাপতি অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মেহের নেগার এলে তাকে কবিগণ বিষয়টি জানালে তিনি উল্টো কবি’দের উপর বিরক্তি প্রকাশ করেন ও রাগ দেখিয়ে কালচারাল অফিসার মনিরুজ্জামান মনিরকে ডেকে রাগ প্রকাশ করেন। কবিগন অত্যন্ত বিনয়ের সাথে- অনুষ্ঠানে কোনো মেহমান না থাকা, অনুষ্ঠানের কোনো খোঁজ খবর না রাখা, দুপুরে খাওয়া-দাওয়ার আয়োজন না করা, চা নাস্তা কিবা পানিও না দেওয়ার বিষয়টি অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মেহের নেগারকে জানালে- ‘তিনি বা তাঁর এসব দেখার বিষয় নয়’ কিবা ’তাঁকে এসব কেন জানানো হচ্ছে?’ এ নিয়েও রাগান্বিত হয়ে তিনি যথেষ্ট বাংলা ইংরেজি মিলিয়ে ক্ষুদ্ধতা প্রকাশ করেন। রাত সাড়ে নয়টার দিকে উপস্থিত তিন-চারজন কবি’কে একটা জল পানের মগ ও অভিনন্দনপত্র দেয়ার মধ্যোদিয়ে দুই দিনের আয়োজন শেষ করা হয়। কবি’দের কোনো যাতায়াত সম্মানী দেয়া হয়নি। ৩. দুই দিনব্যাপী এ অনুষ্ঠানস্থলে ছিলেন নোয়াখালীর কবি ও লোক গবেষক ম পানা উল্লাহ। তিনি বলেন- ‘এটা কোনো আয়োজনই হয়নি। আমাদের নোয়াখালীতে দুই দিনব্যাপী প্রোগ্রামে দুই দিনেই দুপুরে খাওয়ার আয়োজন ছিলো, চার বার চায়ের আয়োজন ছিলো, ক্রেস্ট ও উত্তরীয় পরিয়ে দিয়ে কবি’দের সম্মানিত করা হয়েছে। যাওয়ার সময় কবি’দের খামেপুরে যাতায়াত খরচ বাবদ এক হাজার টাকা ও যারা প্রবন্ধ লিখেছেন তাদের দুই হাজার টাকা করে সম্মানী দিয়েছেন জেলা প্রশাসক। কিন্তু আপনাদের লক্ষ্মীপুরে এটা কি অনুষ্ঠান হয়েছে এতো কৃপণতা করে? আমার বুঝে আসেনা।’ এমনটি বললেন নোয়াখালী থেকে আসা প্রাবন্ধিক কবি ড. আজাদ বুলবুল। তিনি বলেন- ‘আমি বিস্মিত ও হতাশ হয়েছি, লক্ষীপুরের কবিদের মূল্যায়ন করা হয়নি। দুপুরে লাঞ্চ পর্যন্ত করানো হয়নি শুনে আমার ভীরমী খাওয়ার দশা হয়েছে।’ জেলার সর্বজন শ্রদ্ধেয় কবি মুজতবা আল মামুন প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন -‘পাঁচ লাখ টাকা বরাদ্দ হয়েছে অনুষ্ঠান করার জন্য। এ অনুষ্ঠানে তো এক লাখ টাকাও খরচ করেনি জেলা প্রশাসক। দুপুরে কবি’দের লাঞ্চ করায়নি, আমি এতে খুবই হতাশ তাই আমি এই অনুষ্ঠান বর্জন করেছি।’ জেলার সাহিত্য সংস্কৃতিসেবী ও লেখক সেলিম উদ্দিন নিজামী বলেন- কবি’দের দাওয়াত দিয়ে এনে কোন খোঁজ খবর রাখে নি এমনকি দুপুরে খাওয়া-দাওয়ারও কোনো আয়োজন করেনি জেলা প্রশাসক। আমরা জেলা সাহিত্য মেলা বর্জন করেছি। ৪. জেলা উপজেলা পর্যায়ে কবি সাহিত্যিক ও সাহিত্যসেবীদের মূল্যায়ন করার লক্ষ্যে, সাহিত্য ও সংস্কৃতিচর্চা তৃণমূল পর্যায়ে বেগবান করার লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বইমেলা উদ্বোধনীতে বাংলা একাডেমি ও সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দেন। তারই ধারাবাহিকতায় জেলা পর্যায়ে পাঁচ লাখ টাকা ও উপজেলা পর্যায়ে তিন লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। কবি সাহিত্যিক ও সাহিত্য সেবিদের নিয়ে জেলা সাহিত্য মেলার আয়োজন করার জন্য। এ সাহিত্য মেলার মূল লক্ষ্য হচ্ছে জেলা উপজেলা ভিত্তিক কবি সাহিত্যিকদের একত্রিত করে তাদের নাম, ছবি ও প্রকাশনা কর্মের তালিকা ডাটাবেজ আকারে সংরক্ষণ করে জাতীয় পর্যায়ে তুলে ধরা। কিন্তু লক্ষ্মীপুরে দু’একজন তৈলমর্দনকারীর কারণে কবি সাহিত্যিক সংস্কৃতিসেবীরা অবমূল্যায়িত হচ্ছে সবসময়। সরকারি এমন আয়োজন কেনো প্রশ্নবোধক হবে তা কবি’রা কখনো ভাবতেই পারেনি। লেখকঃ কবি প্রাবন্ধিক কলামিস্ট ও সাংবাদিক