তিনি সরকারি অফিসের প্রথম শ্রেণির পদমর্যাদার কোন কর্মকর্তা না, কিংবা দি¦তীয়, তৃতীয় বা চতুর্থ শ্রেণির পদমর্যাদার সরকারি কর্মচারী। কাজ করেন কনজেন্সী স্টাফ হিসেবে। অর্থাৎ দৈনিক মাত্র ৫শ’ ৫০ টাকা হাজিরা ভিত্তিতে। অথচ জেলার প্রাণকেন্দ্র হাজীগঞ্জ বাজার এলাকায় রয়েছে তার ৬ তলাবিশিষ্ট আলিশান বাড়ি। যা কুমিল্লা-চাঁদপুর আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে হাজীগঞ্জ পৌরসভাধীন ৪নং ওয়ার্ডে (মকিমাবাদ গ্রাম) খন্দকার আরিয়ান প্লাজা হিসেবে পরিচিত। তিনি চড়েন ব্যক্তিগত (মাইক্রো) গাড়িতে। প্রতিদিন এই ব্যক্তিগত গাড়ি দিয়েই অফিসে যাতায়াত করেন। তবে অফিস থেকে অনেক দূরে গাড়ী থেকে নেমে পায়ে হেঁটে যান অফিসে। নিজস্ব রড, সিমেন্ট, মুদি মালামাল, গাড়ির ব্যবসাসহ মাছ ও গরুর খামার এবং বিঘা-বিঘা সম্পত্তি। অথচ একসময় আকিজ ট্যোবাকো, হাজীগঞ্জ ডিলারের অধীনে (বিড়ি, সিগারেট) সেলসম্যানের চাকরি করেছেন। মাত্র ৯ বছরেই আগে তিনি একটি প্রকল্পের আওতায় সরকারি অফিসে কনজেন্সী স্টাফ হিসেবে দৈনিক ৫শ’ ৫০ টাকা হাজিরা ভিত্তিতে অস্থায়ী চাকরি পান। এরপর থেকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তার। চাকরি নয়, তিনি যেন হাতে পেয়েছেন ‘আলাদিনের চেরাগ’। ইতোমধ্যে এলাকায় দানবীর হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছেন। বাড়ির সামনে পাঞ্জেগানা মসজিদের ইমামের মাসিক বেতন তিনি একাই দিয়ে (পরিশোধ) থাকেন। রয়েছে ব্যক্তিগত গাড়ির ড্রাইভার (চালক) ও বাড়ির কেয়ারটেকার কাম দারোয়ান। অথচ তিনি নিজেই বেতন পান মাত্র ১২ হাজার ১শ’ টাকা (প্রতি মাসে ২২ কর্মদিবস হিসেবে)। শুধু তাই নয়। চাকরি পাওয়ার পর, তিনি তার বড় দুই ভাইকে বাহরাইন ও কাতারে নিজ খরচে পাঠিয়েছেন। যদিও বাহরাইন যিনি গিয়েছেন তিনি বর্তমানে এলাকায় মুদি মালের ব্যবসা করছেন। ওই দুই ভাই পালিত বাবা মৃত ইসমাঈল হোসেনের সন্তান নয়। তার জন্মদাতা বাবা মৃত আব্দুল লতিফের। এই ঘরে তারা ৫ ভাই। চাচা ইসমাঈল হোসেন নিঃসন্তান ছিলেন। তাই তিনি বড় ভাইয়ের ছোট ছেলেকে দত্তক নিয়েছে। বলছি, বিল্লাল হোসেন খন্দকারের কথা। তিনি লক্ষ্মীপুর জেলার রামগঞ্জ উপজেলার ব্রক্ষ্মপাড়া গ্রামের খন্দকার বাড়ির মৃত ইসমাঈল হোসেনের পালিত ছেলে। তিনি রামগঞ্জ উপজেলায় হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার কার্যালয়ে কনজেন্সী স্টাফ (দৈনিক হাজিরা ভিত্তিক) হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। স্ত্রী, সন্তান নিয়ে হাজীগঞ্জে ৬ তলাবিশিষ্ট একটি আলিশান ভবনে বসবাস করছেন। হাজীগঞ্জ থেকে দৈনিক ব্যক্তিগত গাড়িতে চড়ে রামগঞ্জ গিয়ে অফিস করেন। তার (বিল্লাল হোসেন) রয়েছে হাজীগঞ্জে খন্দকার আরিয়ান প্লাজা নামক ৬ তলা বিশিষ্ট আলিশান বাড়ি (২০১৭ সালে নির্মিত), গ্রামের বাড়িতে (রামগঞ্জের ব্রহ্মপাড়া গ্রাম) একতলা বিশিষ্ট একটি ভবন। তিনতলা ভবনের নির্মাণ কাজ শেষের পথে। আরিয়ান এন্টারপ্রাইজ নামে রড-সিমেন্ট ও জিহাদ এন্টারপ্রাইজ নামের মুদি মালামালের দোকান এবং কয়েকটি সিএনজিচালিত অটোরিক্সা ভাড়া দিয়েছেন। রয়েছে গরু ও মাছের খামার। অভিযোগ রয়েছে, নিজ ও স্ত্রী এবং আত্মীয়-স্বজনের নামের রামগঞ্জ, হাজীগঞ্জ এমনকি শ্বশুর বাড়ি ফরিদগঞ্জে বিঘা-বিঘা সম্পত্তি। স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, তারা একসময় গরিব ছিলেন। বিল্লাল সরকারি চাকরি পাওয়ার পর ভাগ্যের বদল হয়েছে। কথা হয়, বিল্লাল খন্দকারের বড় ভাই হান্নানের সাথে। তিনি জানান, তাদের আর্থিক অবস্থানের পরিবর্তন হওয়ায় গত দুই বছর ধরে বিভিন্নভাবে লোকজন (সাংবাদিক, সরকারি কর্মকর্তা) এসে তাদের খোঁজ-খবর নিচ্ছেন। তিনি বলেন, তারা পাঁচ ভাই। তার মধ্যে ছোট ভাই বিল্লাল খন্দকারকে চাচা ইসমাঈল খন্দকারের কাছে দত্তক দেয়া হয়েছে। কারণ, তিনি নিঃসন্তান ছিলেন। হান্নান কনস্ট্রাকশনের কাজ করেন এবং অপর দু’ভাই কৃষি কাজ, এক ভাই মুদি দোকান এবং ছোট ভাই (বিল্লাল) সরকারি চাকরি করেন। তিনি জানান, রড-সিমেন্ট, মুদি মালামাল এবং গাড়ির ব্যবসা, মাছ ও গুরুর খামার যৌথভাবে (সব ভাইয়ের)। হাজীগঞ্জ এবং রামগঞ্জের বাড়িও যৌথভাবে নির্মিত। তবে বাড়িতে নির্মাণাধীন তিনতলা বাড়িটি কাতার প্রবাসী ভাইয়ের। তারা সবাই বাড়িতে থাকেন, আর ছোট ভাই বিল্লাল হাজীগঞ্জে বাড়িতে থাকেন। হান্নান আরো বলেন, রড-সিমেন্ট, মুদি মালামালের ব্যবসা এবং মাছ ও গরুর খামার দেখাশুনার জন্য লোকজন (বেতনভুক্ত কর্মচারী) রয়েছে। তারা নিজেরাও দেখেন। সিএনজি রয়েছে ৪/৫ টা। যা ভাড়া দেয়া হয়েছে। মসজিদের ইমামের মাসিক বেতন বিল্লাল একাই পরিশোধ করে থাকেন বলে তিনি জানান। তবে বিল্লাল হোসেন খন্দকার জানান, হাজীগঞ্জের বাড়িটি তার নিজস্ব। বাড়ির সম্পত্তি পৈত্রিক (পালিত বাবার)। অথচ জানা গেছে এ সম্পত্তি পৈত্রিক সূত্রে নয়, ক্রয়সূত্রে মালিক তিনি। রড-সিমেন্ট, মুদি মালামালের ব্যবসাও তার নিজস্ব বলে স্বীকার করেন। ব্যাংক ঋণ নিয়ে তিনি বাড়ি-গাড়ি করেছেন বলে জানান। হাজীগঞ্জে আকিজ ট্যোবাকোতে চাকরি করেছেন উল্লেখ করে বিল্লাল হোসেন খন্দকার বলেন, ৯ বছর আগে রামগঞ্জ উপজেলায় হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার কার্যালয়ে চাকরি হয়েছে। এরপর তিনি নামাজের সময় হয়েছে বলে ফোন কেটে দেন। পরবর্তীতে বার-বার ফোন দিলেও তিনি মোবাইল ফোনটি রিসিভ করেননি। রামগঞ্জ উপজেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা জানান, কনজেন্সী স্টাফ হিসেবে দৈনিক ৫৫০ টাকা হাজিরা ভিত্তিক বিল্লাল হোসেন অস্থায়ী কর্মচারি হিসেবে কর্মরত আছেন।