ছাতক প্রতিনিধিঃ সুনামগঞ্জের ছাতকে সমতা স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ নাসির উদ্দিনের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতিসহ নানা অভিযোগ উঠেছে। কলেজের অধ্যক্ষের পাশাপাশি তিনি ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে রয়েছেন। বিদায় এলাকায় তার ব্যাপক প্রভাব রয়েছে বলেও জানিয়েছেন স্থানীয়রা। জানা যায়, গত ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাহাদাত বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে এক আলোচনা সভার বক্তব্যে সমতা স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ নাসির উদ্দিন মাওলানা দেলওয়ার হোসেন সাঈদীর মৃৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেন। ঐ বক্তব্যটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে শুরু হয় সমালোচনা । তবে দলীয় নেতা-কর্মী ও সমর্থকরা তার শোককে প্রত্যাখান করেছেন। নিন্দার ঝড় উঠেছিল ফেসবুকেও। এ বিষয়টি উপজেলা ও জেলা শিক্ষা অফিসেও গড়াগড়ি করতে থাকে। তবে সংগঠনের পক্ষ থেকে তার বিরুদ্ধে নেওয়া হয়নি কোন ব্যবস্থা। এছাড়াও অফিস সহকারির নামে ভূয়া বেতনভাতা প্রস্তুত করে নিজের স্বাক্ষরে উত্তোলন করারও অভিযোগও উটেছে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে। এ বিষয়ে উপজেলা প্রশাসন কর্তৃক তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়। অভিযোগ উঠেছে, ২০১৮ সালে নাসির উদ্দিন সমতা স্কুল এন্ড কলেজে যোগদানের পর প্রতিষ্ঠানের আয় ব্যয় হিসাব দিচ্ছেন না। এলাকাবাসী তার বিরুদ্ধে একাধিবার বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করলেও অদৃশ্য শক্তির কারণে অভিযোগগুলো গায়েব হয়ে গেছে। যে কারণে অভিযোগগুলা হয়নি তদন্ত। অভিযোগ থেকে জানা যায়, অফিস সহকারি মনিরুল ইসলাস মুন্না ছুটি না নিয়ে ২০২২ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর চাকুরীর তথ্য গোপন করে যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমান। এই সুযোগে তার বেতনভাতা অধ্যক্ষ নিজেই স্বাক্ষর দিয়ে উত্তোলন করেন। এ ঘটনায় গেল ১৪ আগষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরে একটি লিখিত অভিযোগ করেন, স্থানীয় সাতগাও গ্রামের চমক আলীর পুত্র আবুল কালাম আজাদ। তবে অদ্যবদি অভিযোগটি তদন্ত হয়নি। অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগে গেল ৩ আগষ্ট স্থানীয় কালিপুর গ্রামের মৃত খাতিব মামনের পুত্র, প্রতিষ্ঠান পরিচালনা কমিটির সদস্য গিয়াস উদ্দিন সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক বরাবরেও একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। এছাড়া সরকারি প্রকল্পের কাজ না করে আইনাকান্দি কামারগাঁও- সুদুখালি রাস্তা মেরামতের নামে ২ লাখ, বেরিবাঁধের কাজ না করে ৩ লাখ, সমতা স্কুল এন্ড কলেজের রাস্তা উন্নয়নের নামে আরও ২লাখ টাকা আত্মসাত করারও অভিযোগ পাওয়া গেছে। কাজ না করানোর কথা জানিয়েছেন সিংসাপইর ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান, ইউপি সদস্য সহ স্থানীয়রা । এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে স্থানীয় সংবাদকর্মীরা সরজমিন অনুসন্ধান করতে গেলে। ঐ অধ্যক্ষ নিজেকে রক্ষার সার্থে একটি প্রকল্পের উত্তোলনকৃত দেড়লাখ টাকা গত ১৭ সেপ্টেম্বর ব্যাংকের মাধ্যমে সরকারী কোষাগারে ফেরত জমা করেন। গত ২৪ আগষ্ট উপজেলা পরিষদের মাসিক সাধারণ সভায ১৭জন সরকারি কর্মকতা ও ১১জন জনপ্রতিনিধির উপস্থিতে ইউপি চেয়ারম্যান সাহাব উদ্দিন মোহাম্মদ সাহেল তার বক্তব্যে,সমতা স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ নাসির উদ্দিন ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস অনুষ্ঠানে যুদ্ধাপরাধী দেলোয়ার হোসাঈন সাইদীর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে জাতীয় শোক দিবসকে বিনষ্ট করেছেন বলে বক্তব্য দেন। এছাড়াও অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে নিয়োগ বাণিজ্য, অর্থ আত্মসাতসহ নানা অভিযোগ উটে। ইতিমুধ্যে তিনি একটি হত্যা মামলায় এক মাসেরও বেশি সময় কারাগারে ছিলেন। এদিকে,অধ্যক্ষ কর্তৃক সাঈদীর মৃৃত্যুতে শোক প্রকাশ করায় কারণ দর্শানোর নোটিশ করেছেন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার পুলিন চন্দ্র রায়। এঘটনায় তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন বলেও নিশ্চিত করেছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার নূরের জামান চৌধুরী। জানতে চাইলে অধ্যক্ষ নাসির উদ্দিন বলেন, মিজান হত্যার মামলায় তিনি একমাস ৬ দিন কারাগারে ছিলেন। তবে প্রতিষ্ঠানের অফিস সহকারি মনিরুল ইসলাস মুন্নার বেতনভাতার ১ লাখ ২৮ হাজার ৬১৩ টাকা নিজ সাক্ষরে উত্তোলন বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন। সব ডকোমেন্ট তৈরি করে কাগজে স্বাক্ষর করেছিলেন, আর টাকা উত্তোলন করেছে মুন্নার পরিবার। সম্প্রতি বেতনভাতার উত্তোলনকৃত টাকা চালানের মাধ্যমে সরকারি ফান্ডে জমা দেয়া হয়েছে। এছাড়া ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসে সাঈদীর মৃৃত্যুতে শোক প্রকাশের সত্যতা নিশ্চিত করেন তিনি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন টিআর প্রকল্পের মাধ্যমে বটেরখালের পারে বেরিবাঁধের জন্য ৩লাখ টাকা বরাদ্দ হয়েছিল। এর মধ্যে দেড় লাখ টাকা তিনি উত্তোলন করেছিলেন। কাজ করতে না পারায় গত ১৭ সেপ্টেম্বর চালানের মাধ্যমে ওই টাকাগুলো সরকারী কোষাগারে জমা দিয়েছেন। সিংচাপইড় ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সাহাব উদ্দিন মোহাম্মদ সাহেল বলেন, জাতীয় শোক দিবসে দন্ডপ্রাপ্ত আসামি দেলওয়ার হোসেন সাঈদীর মৃৃত্যুতে শোক প্রকাশের একটি ভিডিও ক্লিপসহ উপজেলা মাসিক সভায় তিনি তুলে ধরেছিলেন। এঘটনায় একমাস অতিবাহিত হলেও কর্তৃপক্ষ কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করছেন না। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা পুলিন চন্দ্র রায় বলেন, অধ্যক্ষ নাসির উদ্দিন কর্তৃক সাইদীর শোক জানানোর বিষয়টি উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা ও জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে লিখিত ভাবে অবগত করা হয়েছে।